শব্দের পোস্টমর্টেম - ৯১
গাছের তাল থেকে নয়, সঙ্গীতের তাল থেকেই তালকানা শব্দটির উৎপত্তি। গানে, বাজনায় বা নাচে স্থানে স্থানে ঝোঁক পড়ে, ঝোঁকগুলোকে শৃংখলভাবে সাজিয়ে নিলে তাল সৃষ্টি হয়। আর তালের গতি হলো লয়। তাল ও লয় ভঙ্গ হলে রস ভঙ্গ হয়। তালকানা শব্দের মূল অর্থ হলো যার তাল ও লয় জ্ঞান নেই। আর গৌনার্থ হলো যার কান্ডজ্ঞান নেই।
শব্দের পোস্টমর্টেম - ৯২
সংস্কৃত থেকে থেকে বাংলায় ঢোকার পর দিগগজ শব্দের অর্থ এখন পাল্টে গেছে। দিগগজরা হলেন সত্যিকারের মহাপন্ডিত। কিন্তু বাংলায় তারা মহামূর্খ বা হস্তিমুখ। আভিধানিক দিক থেকে দিগগজ শব্দের অর্থ অষ্টদিক ও কোণ রক্ষাকারী হস্তিগণ। এই অষ্টদিক ও কোণ হচ্ছে : পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, নৈর্ঋত, ঈশান, অগ্নি ও বায়ু। আর হস্তিগণ হচ্ছেন ঐরাবত, পুন্ডরীক, বামন, কুমুদ, অঞ্জন, পুষ্পাদন্ত, সার্বভৌম ও সুপ্রতী। তারা দিকরক্ষার পাশাপাশি সব খবর দেবতাদের দেন। অবশ্য বিদ্যাদিগগজ বা দিগগজ পন্ডিত বলতে এক সময় বাংলা ভাষায়ও মহাপন্ডিত (যেমন, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত লিখেছেন, 'দিগগজ তোমার কিঙ্কর স্নানে') বোঝাতো। কিন্তু এখন দিগগজরা আর কল্কে পান না ('ইংরেজি জানিলে কি হইবে, এসব বিষয়ে একেবারে দিগগজ')।
শব্দের পোস্টমর্টেম
বাংলা ভাষায় 'টানাপোড়ন' শব্দটি এসেছে তাঁত থেকে। সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম লিখেছেন, 'তাহার পরনে মোটা ধুতি, এমন মোটা যে, টানাপড়েনগুলি স্পষ্ট চোখে পড়ে'। বাংলায় 'টানাপড়েন' শব্দটিও শুদ্ধ।তাঁতের ফ্রেমে বাঁধা দৈর্ঘের সুতোকে 'টানা' ও প্রস্থের সুতোকে বলা হয় 'পোড়ন'। পোড়নের সুতো মাকুতে জড়ানো থাকে। মাকু ডানে-বামে অনবরত আসা-যাওয়া করে। ওতেই তাঁতের কাপড় বোনা হয়। এ কারণে বাংলা অভিধানে টানাপোড়নের এক অর্থে বলা হয়েছে : পুন:পুন কান্তিকর গমনাগমন।টানা ও পোড়নকে কেন্দ্র করে মাকুর এ অস্থিরতাই আমাদের সঙ্কটময় জীবনে ঢুকে থেকে টানাপোড়ন বা টানাপড়েন হিসেবে।